বেশি বেশি চিনি খেলে কি সত্যি ডায়াবেটিস হয় ৷ ডায়াবেটিস একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করছে। মানুষের মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা রয়েছে যে অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার কারণে ডায়াবেটিস হয়।
এই ধারণাটি কতটা সঠিক তা নির্ণয় করা প্রয়োজন। এ নিবন্ধে আমরা বেশি চিনি খাওয়া এবং ডায়াবেটিসের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করব।
সুচনা:
1.ডায়াবেটিস কি?
ডায়াবেটিস হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা যেখানে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না বা ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ইনসুলিন হলো একটি হরমোন যা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিসের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে:
>চিনি এবং ডায়াবেটিস: একটি প্রাথমিক ধারণা : ডায়াবেটিস মূলত দুই প্রকার— টাইপ ১ এবং টাইপ ২। টাইপ ১ ডায়াবেটিস একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলোকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে। অন্যদিকে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস শরীরের ইনসুলিন ব্যবহারে অক্ষমতা বা ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে হয়।
চিনি এবং টাইপ ১ ডায়াবেটিস : টাইপ ১ ডায়াবেটিসের সাথে চিনি খাওয়ার সরাসরি সম্পর্ক নেই। এটি একটি জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণগুলির কারণে সৃষ্ট একটি রোগ। তাই, চিনি খাওয়া টাইপ ১ ডায়াবেটিসের কারণ নয়।
চিনি এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস : টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে, ওজন বৃদ্ধি একটি প্রধান কারণ। বেশি চিনি খাওয়া অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের একটি উৎস, যা ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে, সরাসরি চিনি খাওয়া এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট কারণ-কার্য সম্পর্ক স্থাপন করা কঠিন।
2. অতিরিক্ত পিপাসা (Polydipsia)
ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো অতিরিক্ত পিপাসা লাগা। শরীর যখন রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তখন কিডনি বেশি পানি টানতে শুরু করে, যার ফলে অতিরিক্ত পিপাসা অনুভূত হয়।
3.ঘন ঘন প্রস্রাব (Polyuria)
অতিরিক্ত গ্লুকোজ কিডনি দিয়ে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যেতে চায়। এর ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ এবং ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।
4.ওজন কমে যাওয়া
যখন শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না, তখন শরীরের কোষগুলি পর্যাপ্ত গ্লুকোজ পায় না। ফলে, শরীর শক্তির জন্য চর্বি এবং পেশী ভেঙে ফেলে, যার ফলে ওজন হ্রাস পায়।
5.ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
যখন শরীর পর্যাপ্ত গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে না, তখন শরীরের কোষগুলি পর্যাপ্ত শক্তি পায় না। এর ফলে, সারাক্ষণ ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব হতে পারে।
6.দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া
উচ্চ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা চোখের লেন্সে প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়।
৭. ঘা বা ক্ষত সেরে উঠতে দেরি হওয়া
উচ্চ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা রক্তসঞ্চালন এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, যার ফলে ক্ষত বা ঘা সেরে উঠতে সময় বেশি লাগে।
৮. ত্বকে সংক্রমণ
ডায়াবেটিস রোগীদের ত্বকে ফাঙ্গাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। ফলে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন দেখা দিতে পারে।
৯. হাত এবং পায়ের সংবেদনশীলতা হ্রাস
উচ্চ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্নায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে হাত এবং পায়ে জ্বালা, চিনচিন বা অবশ হয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হতে পারে
১০. মেজাজ পরিবর্তন
ডায়াবেটিসের কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার পরিবর্তন মেজাজ পরিবর্তন এবং মনোযোগ কমাতে পারে।
11.প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম অপরিহার্য। অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ এড়িয়ে চলা এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পর্যবেক্ষণ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে
বৈজ্ঞানিক গবেষণা
বিভিন্ন গবেষণা দেখিয়েছে যে যারা উচ্চ পরিমাণে চিনিযুক্ত পানীয় (যেমন সফট ড্রিংক) পান করেন তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে।
চিনিযুক্ত পানীয়গুলি উচ্চ ক্যালোরি এবং কম পুষ্টি মূল্য দেয়, যা ওজন বৃদ্ধি এবং ইনসুলিন প্রতিরোধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে, এটি মোট চিনির চেয়ে চিনিযুক্ত পানীয়ের প্রভাবের উপর বেশি নির্ভর করে।
উপসংহার
চিনি খাওয়ার সঙ্গে সরাসরি ডায়াবেটিস হওয়ার সম্পর্ক নেই, তবে অতিরিক্ত চিনি খাওয়া ওজন বৃদ্ধি এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই, পরিমিত পরিমাণে চিনি গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখা জরুরি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url